বিজেপির অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব উপর থেকে নীচ পর্যন্ত রয়েছে। আর তা দেখা যায় নানা সময়ে। কখনও দেখা যায়, শুভেন্দু অধিকারী–সুকান্ত মজুমদারের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আবার কখনও তা দেখা যায় নীচুতলায়। এবার বিজেপির মণ্ডল সভাপতির পদ নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এল। আর তার জেরে পার্টি অফিসে তালা পড়ল। এলাকায় সেঁটে গেল পোস্টার। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট বিজেপির সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সভাপতি তাপস ঘোষ টাকার বিনিময়ে বাদুড়িয়ায় বিশ্বজিৎ পালকে পৌর মণ্ডল সভাপতি নিয়োগ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই বিজেপির কর্মীরা পার্টি অফিসের তালা দিয়ে দিল। আর পোস্টারে লেখা হল, সৌজন্যে—বাদুড়িয়া বিধানসভা বিজেপি কর্মীবৃন্দ।
এটা শুধু যে বসিরহাটে হয়েছে এমন নয়। বেশিরভাগ জেলাতেই বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে নানা ব্লকে নতুন মণ্ডল সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে বাদুড়িয়াতেও বিজেপির পৌর মণ্ডল সভাপতি হয়েছে বিশ্বজিৎ পাল। যাঁর ডাক নাম ছোট। কিন্তু এই বিশ্বজিৎ পালকে বিজেপির অন্য কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। এই নিয়েই ঝামেলার সূত্রপাত। সেই অশান্তিই এখন জেলায় চরমে উঠেছে। কারণ জেলা সভাপতি কারও কথা শুনছেন না বলে অভিযোগ। তাই জেলা সভাপতি তাপস ঘোষের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল এলাকায়। আর কর্মীরা তালা মারল পার্টি অফিসে রাতের অন্ধকারে।
আরও পড়ুন: কৃত্রিম মেধা–ডেটা সায়েন্স আর পৃথক বিষয় হিসাবে নয়, উচ্চমাধ্যমিকে একটাই পত্র
এই বিজেপির জেলা সভাপতি তাপস ঘোষের বিরুদ্ধে গত ১৭ তারিখ বসিরহাটের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছিলেন, পার্টি অফিসের নাম করে তাঁর দোকান থেকে টাইলস এবং স্যানিটারি মালপত্র নিয়ে গিয়েছিল তাপস ঘোষ। কিন্তু ওই সামগ্রীর একটি টাকাও দেয়নি। এবার অভিযোগ উঠেছে, তাপস ঘোষের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময় পৌর মণ্ডল সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। আর এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে বারুইপুরে যাদবপুর–জয়নগর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির কার্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হন বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, কর্মীদের লুকিয়ে রাতের অন্ধকারে মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন কেন হল? এমন পরিস্থিতি এবার সর্বত্র দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তালা পড়ল বিজেপি পার্টি অফিসে, যাদবপুর–জয়নগর কার্যালয় বন্ধ
আগামী বছর ২০২৬ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন আছে। তার আগে প্রত্যেক জেলায় বিজেপির যে অবস্থা প্রকাশ্যে আসছে তাতে বড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিষয়ে বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ‘আমি কোনও টাকার বিনিময়ে মণ্ডল সভাপতি নিয়োগ করিনি। সবাই ভোটের মাধ্যমে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছে। আমাদের মধ্যে কোন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। তৃণমূল চক্রান্ত করে এই পোস্টার এবং আমাদের দলের বদনাম করার চেষ্টা করছে।’ পাল্টা বসিরহাটের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘বিজেপির বাংলায় কোন জায়গা নেই। ওদের মধ্যে কে নেতা হবে সেই নিয়ে ওদের মধ্যেই লড়াই চলে। এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। এসবের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই।’