প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়
🍎এই তো কিছু দিন আগের কথা, ভরপর প্রাণশক্তি আর নতুন কিছু শেখার তাগিদ নিয়ে শীতের সকালে বেরিয়ে পড়েছিলাম নিউটাউনের DLF বিল্ডিং-এর উদ্দেশ্যে। যার ১২ তলায় ছিল ফিভার এফএমের অফিস। সেখানেই শুরু হয়েছিল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার পথচলা। তারিখটা ১৯শে নভেম্বর ২০১৯। হিন্দুস্তান টাইমসের বাংলা পোর্টালের তিন নম্বর কর্মী হিসাবে আমার যোগদান। তারপর কেটেছে ৫ বছর!
✨সাংবাদিককতার দুনিয়ায় আমি পা রাখি ২০১৪-য়। এরপর টানা ৫ বছর টেলিভিশন মিডিয়ামে কাজ করেছি। ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে কাজ করার ব্যাপারে মনে খানিকটা দ্বন্দ্ব ছিল। তবে নতুন কিছু শেখবার তাগিদ আর 'ব্র্যান্ড' হিন্দুস্তান টাইমসে কাজ করার সুযোগ, এর জেরেই পরিবর্তনের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিই।
﷽ভরা নিউজ ডেস্কে কাজ করতে অভ্যস্ত ছিলাম আমি। নতুন অফিসের পরিবেশটা বেশ অন্যরকম। কারণ সেখানে সারাক্ষণ দু-দিকে দুটো রেডিও স্টেশন (ফিভার এবং রেডিও ওয়ান)-এর গান বেজে চলেছে। তার মাঝে খবর লেখার কাজটা সহজ ছিল না, তবে ওই দুই অফিসের সহকর্মীরাও আমাদের আপন করে নিয়েছিল অবলীলায়। সফরের শুরুতে আমার সঙ্গী বলতে ছিল দু-জন অয়ন আর উদ্দালকদা। বয়সে অয়ন আমার চেয়ে বছর খানেকের ছোট, কাজের ক্ষেত্রে ভীষণ চটপটে তবে এমনিতে মুখচোরা। ওর কাছে প্রিয়াঙ্কাদি থেকে এই মহিলা (হ্যাঁ, এই নামেই সে আমাকে ভালোবেসে ডাকে) বেশ সময় লেগেছে। অন্যদিকে উদ্দালোকদার অভিজ্ঞতা থেকে মাস কয়েকের মধ্যে অনেক কিছু শেখবার সুযোগ পেয়েছি। উপরি পাওনা ছিল, উদ্দালোকদার হাতের রান্না। ওঁনার লাঞ্চে আমি আর অয়ন নিয়মিত ভাগ বসাতাম। অয়নের মতো উদ্দালোকদাও আমাকে অন্য নামেই ডাকতেন-‘ডাক্তার’। যদিও সেই নামের পিছনের কারণ আজ অবধি আমার বোধগম্য হয়নি।
꧅আমাদের সম্পাদক অর্ঘ্য প্রসূন রায়চৌধুরী। সে কারুর 'বস' নয়, মূলত দাদা কিংবা ভাই। আমার ক্ষেত্রে অবশ্য এই সমীকরণটা খানিক আলাদা। আমরা একসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি, সেই সুবাদে সহকর্মীর আগে, আমরা সহপাঠী। শুরু থেকেই আমার দায়িত্ব ছিল বিনোদন বিভাগের। অফিস শুরুর তিন মাসের মধ্যেই গোটা পৃথিবীতে নামল করোনার প্রকোপ! অতিমারীর জেরে অফিসের ঝাঁপ বন্ধ, শুরু ওয়ার্ক ফ্রম হোম!
📖করোনাকালে বাড়ি থেকে কাজ করা সহজ ছিল না। চারিদিকে আতঙ্ক, ভয়, মৃত্যু আর মাঝেই নিজের ঘরে বসে অবিরত কাজ করে চলা। তখন আমাদের টিমের লোকসংখ্যা ছিল হাতেগোনা, বিনোদনে আমি একা। সবাই জান-প্রাণ ঢেলে কাজ করেছে। অফিসের গোড়ার দিকের কথা বলতে গেলে, একটা দিনের কথা না বললেই নয় ১৪ই জুন ২০২০! সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু গোটা দেশের পাশাপাশি আমাকেও নাড়িয়ে দিয়েছিল। সুশান্ত-ভক্ত আমার কাছে ওটা ছিল ব্যক্তিগত শোকের দিন। আগামি কয়েক মাস আমার জীবনে সুশান্ত মামলা ছাড়া আর কিছুই ছিল না!
༺সময়ের সঙ্গে আমাদের টিমের সদস্য় সংখ্যা বেড়েছে। সকলে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছে নিজেদের কাজ। এন্টারটেনমেন্টের টিমের সুমন, তুলিকা, রণিতা, শুভস্মিতা সকলেই নিজেদের সেরাটা দেওয়ার পাশাপাশি, সবক্ষেত্রে আমাকে সাপোর্ট করেছে। ধীরে ধীরে আমরাও জনগণের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। ভালো-খারাপ, চড়াই-উতরাই মিলিয়ে মিশিয়েই গোটা সফর। রিটেনার হিসাবে আমি চাকরিতে যোগ দিই, সেখান থেকে আজ আমি এখানকার অন-রোল কর্মী। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলায় চাকরি করার সময় আমার ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক বদল এসেছে। আমি বিয়ে করেছি, এখন আমি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটা ধাপেও আমার সহকর্মীরা আমাকে সাহায্য করেছে। খুব শীঘ্রই আমি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাব, হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা-কে জানি না কতটুকু দিতে পেরেছি, কিন্তু নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। এই সফর, এই বন্ধন আগামিতে আরও জোরালো হবে সেটাই আশা করি।